দখিনের খবর ডেস্ক ॥ পুরো বিশ্ব করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। দেশেও থেমে নেই সংক্রমণ, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এরইমধ্যে জানা যাচ্ছে, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ভয় জাগাচ্ছে সীমান্তবর্তী ৩০ জেলা। ফলে এই পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্র্রসঙ্গত বলা দরকার, ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দুই দেশের মধ্যে সব ইমিগ্রেশন পথ বন্ধ রয়েছে। চোরাপথে ভারত থেকে যাতে কেউ দেশে ঢুকতে না পারে এজন্য সীমান্তে নজরদারি ও টহলও বাড়ানো হয়েছে। স্থল ও নদীবেষ্টিত বিস্তীর্ণ সীমান্ত পথে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজিবি। এসবের পরও বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং আকস্মিকভাবে দুই দেশের মধ্যে ইমিগ্রেশন বন্ধের কারণে আটকে পড়া বিপুলসংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে সীমান্ত পার হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর যে সব মানুষ চিকিৎসা সেবা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বিনা পাসপোর্টে চোরাপথে ভারতে গেছেন, তারা তড়িঘড়ি করে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি, চোরাকারবারি ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটাতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। আমরা মনে করি, এই আশঙ্কাকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। বলা দরকার, করোনাভাইরাসের শক্তিশালী ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে দেশে ঢুকতে না পারে এজন্য বেশ কিছুদিন আগেই আকাশপথ ও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। সব সতর্কতা ফাঁকি দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় একটি ধরন প্রবেশ করেছে বলে জানা গিয়েছিল। ফলে সম্প্রতি যখন চোরাকারবারি ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ভয়াবহভাবে বিস্তারের আশঙ্কা উঠে আসছে- তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজিবির টহল জোরদার করে চোরাচালান রাতারাতি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যাবে- এমন আশা করা ঠিক হবে না। সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব অপতৎপরতা কিছুটা হলেও অব্যাহত রয়েই যাবে। তাই সীমান্তের প্রত্যেকটি জেলায় সার্ভিল্যান্স টিম গঠন করতে হবে। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো, সেখানকার চিকিৎসাব্যবস্থার মান উন্নত করা- আর এজন্য জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও অক্সিজেন মাস্ক থাকতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইসিইউ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। একদিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ভয়, অন্যদিকে মানুষের মধ্য স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমেছে- এমনটিও জানা যায়। ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আরও মারাত্মক আকারে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে- এমন আলোচনাও সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণেই যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আর করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই এবং অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা, অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক পরার ব্যাপারেও অনীহার বিষয় সামনে এসেছে। এ ছাড়া এর আগে করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে শয্যা সংকটের বিষয়টিও জানা গিয়েছিল। আমরা বলতে চাই, করোনা মোকাবিলায় যে কোনো সংকট থাকলে তা দূর করতে হবে। কেননা তা না হলে সেবাপ্রাপ্তি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। সর্বোপরি বলতে চাই, ভারতে করোনা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে- এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে তেমনি, চোরাকারবারি ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটাতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কা করছেন সেটাকে সামনে রেখেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।
Leave a Reply